প্রিন্ট এর তারিখঃ সোমবার ১৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ প্রশ্ন ফাঁস করেছে স্বয়ং প্রশ্নপত্র প্রনয়ন কমিটির সদস্যরা

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ প্রশ্ন ফাঁস করেছে স্বয়ং প্রশ্নপত্র প্রনয়ন কমিটির সদস্যরা। গোয়েন্দা সংস্থা, দুদক এবং সিভিল সার্জন অফিসের বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন অতি গোপনীয়তা বজায় রেখে নিরপেক্ষ স্বচ্ছ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে যেয়ে বাঁধার সম্মুখিন হন কমিটির অন্য সদস্যদের দ্বারা।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ কমিটির সদস্যরা হলেন- খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মুজিবুর রহমান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব শাহাদত হোসেন কবির, পিএসসি খুলনার উপ-পরিচালক নাসরিন সুলতানা, কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের মনোনীত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম।

সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা, দুদক এবং সিভিল সার্জন অফিসের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়- কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ অক্টোবর পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষার্থীদের দিয়ে আলাদা ক্লাশ করে প্রশ্নপত্র তাদের হাতে তুলে দেয়। এ বিষয়টি কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের নজরে আসলে সাংবাদিকদের তৎপরতায় শুক্রবার ভোরে শহরের টালিপাড়া ও কালিশংকপুর এলাকায় বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহে বিষয়টি সকলের নজরে আসে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাপক আলোচিত হয়। ঐ ঘটনায় নাম উঠে আসে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ হোসেন ইমাম এবং তার বড় ভাই সিভিল সার্জন অফিসের উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসান ইমাম নান্নুর। দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত এই দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে দুদক এবং সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নড়ে চড়ে বসেন। শুরু হয় তাদের তৎপরতা। গোয়েন্দা সংস্থা, দুদক এবং সিভিল সার্জন অফিসের সূত্রে জানা যায়- নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির তিনজন সদস্যের মাধ্যমে এই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। তাদের মোবাইল সীজ করলে পুরো বিষয়টি জানা যাবে। সূত্রটি আরো জানায়- নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের আগের দিন রাতে পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়নের সময় নির্দিষ্ট রুমে অবস্থান করতে হবে এবং এসময় কারোর মোবাইল বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সাথে রাখা যাবে না। কিন্তু কমিটির সদস্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব শাহাদত হোসেন কবির, পিএসসি খুলনার উপ-পরিচালক নাসরিন সুলতানা এবং কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মনোনীত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম নিয়মনীতি ভঙ্গ করে মোবাইল ফোন নিয়ে ওই রুমে অবস্থান করাসহ নিয়ম ও শর্ত ভঙ্গ করে একাধিকবার মোবাইলে কথা বলেন। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলমকে বেশি তৎপর দেখা গেছে বলে সূত্রটির দাবী। সূত্রটি আন্দোলনের বাজারকে আরো জানায়-প্রশ্নপত্র প্রনয়ন কাজের নির্দিষ্ট কর্মচারীদের সিলেক্ট করা হয়। কিন্তু কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম ঐ রুমে বসেই মোবাইল ব্যবহার করে কম্পিউটারে প্রশ্নপত্র কম্পোজ করার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট কার্যালয়ের কর্মচারী মাহাবুবকে ডেকে নেন ঐ রুমে। মাহাবুবকে দিয়ে প্রশ্নপত্র কম্পোজের কাজ করানো হয়। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বর্হিভূত। এসময় কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন মাহাবুবকে দিয়ে কম্পোজ না করানোর কথা বললে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম সিভিল সার্জনের সাথে রুঢ় আচরন করেন বলে সূত্রটি জানায়। সুত্রটি আন্দোলনের বাজারকে জানায়- পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের অস্বাভাবিক ও কোন রকমের দুর্নীতির প্রশ্রয় নিতে না পারে সে লক্ষ্যে সিভিল সার্জনের অফিসের রুম এবং বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ডিভাইজ ও ক্যামেরা স্থাপন করা হলে ঐ ক্যামেরার তার ছিড়ে ফেলেন ঐ তিন সদস্য। সদস্যদের পেনড্রাইভ ও মোবাইলসহ সকল প্রকারের ডিভাইজ নিয়ে কক্ষে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম পেনড্রাইভে প্রশ্ন পত্র নিয়ে যান বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। এদিকে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ পরীক্ষার দিন সকালে স্বয়ং জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন সিভিল সার্জন অফিসে বিনা কারনে পরিদর্শনে যান। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার রাতে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলমের নিকট প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং অনিয়মের সাথে তার জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোন মন্তব্য নেই।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়- কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগে কোটি কোটি টাকার বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে বলে জানা যায়। সূত্রটি আরো জানায়, সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল ওয়াদুদকে সিভিল সার্জন অফিস থেকে চাওয়া হলেও জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলমকে ঐ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। ঐ নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব শাহাদত হোসেন কবির। তিনি সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ কমিটিতে থাকাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে সেসময় দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল কিন্তু বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায় বলে সূত্রটি জানায়। শাহাদত হোসেন কবির ২৩ অক্টোবর রাতে সিভিল সার্জন অফিস রুমের ক্যামেরা এবং বিভিন্ন ডিভাইজ ছিড়ে ফেলেন সেই সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন বলে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে।

অপর সদস্য পিএসসি খুলনার উপ-পরিচালক নাসরিন সুলতানা মোবাইল নিয়ে সিভিল সার্জন অফিসে প্রশ্নপত্র তৈরীর কক্ষে প্রবেশ করেন। তিনি একাধিকবার বাথরুমে যেয়ে বাইরে কথা বলেন বলে জানা যায়। সূত্রটি আরো জানায়- ঐ রাতে কমিটির প্রধান এবং খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মুজিবুর রহমান এবং সদস্য সচিব কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন মাহাবুব অসহায়ত্ব অবস্থায় ছিলেন। কারণ ৫ সদস্যের অন্য তিন সদস্য তাদের কোন কথায় কর্ণপাত না করে একের পর এক নিয়ম ভেঙ্গে করে যাচ্ছিলেন। সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন বলে তদন্তকারী সংস্থার সূত্রগুলো জানিয়েছেন। এদিকে দ্বিতীয়বারের মত গতকাল বুধবার সকালে দুদক কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক রওশনী হাসান সিভিল সার্জন অফিসে যান। সেখানে তিনি টিম নিয়ে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন এবং গুরুত্বপুর্ন নথিপত্র ও সিসি টিভির ফুটেজ জব্দ করেন।

সম্পাদক /প্রকাশক: আব্দুল্লাহ আল মামুন। কুষ্টিয়া আমাদের অহংকার,, মিরপুর উপজেলা , কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ। কপিরাইট © মিরপুর টিভি কুষ্টিয়া সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত। নিউজ পোর্টালের জন্য যোগাযোগ ইমেইল :Mirpurtvkushtia@gmail.com.

প্রিন্ট করুন