ঢাকা মঙ্গলবার ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় সন্ত্রাসীদের নৃশংসতা — আহত একাধিক মাঝি, অভিযোগে নৌ পুলিশ নীরব
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
গত ৪ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার সকালে কুষ্টিয়ার ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সংঘটিত হয় এক নৃশংস ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জাকারিয়া পিন্টু, তার ছোট ভাই মেহেদী এবং আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বে গঠিত একটি সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে নৌ পুলিশের সামনেই নিরীহ মাঝিদের উপর হামলা চালিয়ে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে।
ঘটনাস্থল সূত্রে জানা যায়, ওই দিন সকালে “ভাসমান খাজনা” আদায়ের নামে ৮-১০ জন মাঝির উপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালানো হয়। একাধিক মাঝি অভিযোগ করেছেন, তাদেরকে বেধড়ক মারধর করে অর্থ আদায়ে চেষ্টা চালায় পিন্টু-মেহেদী বাহিনী।
এক আহত মাঝি জানান,
> “আমি নৌকা ঘুরাচ্ছিলাম, হঠাৎ মেহেদী পিন্টুর সন্ত্রাসীরা এসে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। পিটিয়ে আমার একটি পা ও একটি হাত ভেঙে ফেলে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে।”
অন্য এক মাঝি বলেন,
> “বেলা ১২টার দিকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন বরফ কল এলাকায় আমি নৌকা ভেড়াচ্ছিলাম। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিন্টু-মেহেদীর লোকজন এসে ‘টাকা দে, ভাসানের টাকা দে’ বলে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে আমার হাত ভেঙে যায়।”
এ বিষয়ে দৌলদিয়া-টু-রাজশাহী নৌচ্যানেলের বৈধ ইজারাদার “গ্রুপঅন সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড”-এর সহকারী পরিচালক সোহেল খন্দকার বলেন,
> “আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ সাঈদ খানের নেতৃত্বে পিন্টু-মেহেদী বাহিনী নিরীহ মাঝিদের উপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা অবৈধভাবে চাঁদা তুলছে।”
তিনি আরও জানান, আহত মাঝিদের তিনি দেখতে যান ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, এবং ঘটনাটিকে “মানবতার পরিপন্থী ও প্রশাসনের ব্যর্থতা” বলে উল্লেখ করেন। তার ভাষায়,
“চাঁদা তিন ভাগে ভাগ হচ্ছে — এক ভাগ সাঈদ খানের কাছে, এক ভাগ মেহেদী-পিন্টুর কাছে, আরেক ভাগ নৌ পুলিশের কাছে যাচ্ছে বলে মাঝিরা জানিয়েছেন।”
সোহেল খন্দকার অভিযোগ করেন, তিনি একাধিকবার নৌ পুলিশের অফিসার ইনচার্জের সাথে যোগাযোগ করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব পাননি।
অন্যদিকে সাংবাদিকরা যখন নৌ পুলিশ অফিসার ইনচার্জের সাথে দেখা করে বিষয়টি জানতে চান, তিনি দাবি করেন,
এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ যদি অভিযোগ করে, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আহত মাঝিরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং “গ্রুপঅন সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড” জানিয়েছে,
“যত ধরনের আইনি প্রক্রিয়া আছে, তার সবগুলোই গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।”
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন প্রকাশ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চললেও কেন নৌ পুলিশ নিরব?
নিরীহ মাঝিদের ন্যায়বিচার এখন সময়ের দাবি।
আপনার মতামত লিখুন :